বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি :
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে প্রায় দেড় কোটি টাকা বাজেটের রাস্তা নির্মানের এক সপ্তাহর মধ্যে ফাটল এবং এজিং ভেঙে গিয়ে হুমকির মুখে পড়েছে নির্মাণাধীন রাস্তা। রাস্তা পূণরায় সংস্কারের কাজ করেন; তাসা কন্সট্রাকশন এন্টার প্রাইজ নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। বোয়ালমারী উপজেলা প্রকৌশলী সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণ সড়ক মেরামত ও সংরক্ষণ এলজিআরডি প্রকল্পের আওতায় ০৫ কি.মি. রাস্তা পূণরায় সংস্কার বাজেট হয়। সাতৈর বাজার থেকে ডোবরা পর্যন্ত ৪.৯৮ কিলোমিটার রাস্তা বাজেট ব্যায় ধরা হয়েছে, ১ কোটি, ৪৮ লাখ, ৪৩ হাজার টাকা। রাস্তা নির্মাণের এক সপ্তাহের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ফাটল, কার্পেটিং উঠে গিয়ে, এজিং ভেঙে পুকুরে চলে গিয়েছে। নিন্ম মানের ইট, খোয়া, পাথর, বালি দেয়ার কারণে বিভিন্ন স্থানে রাস্তা উঁচু নিচু হয়ে দেবে গিয়েছে। গতকাল বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সাতৈর দিঘীর পাড় এলাকায় রাস্তার এজিং ভেঙে দিঘীতে চলে গিয়েছে। মো. সোজা মোল্যার বাড়ির পাশে পিচ ফেঁটে গিয়ে রাস্তা দেবে গিয়েছে। একই গ্রামে খালেক মাতুব্বরের বাড়ির সামনে রাস্তার পাইলিং ভেঙে পুকুরের ভেতরে এবং গো মরা মোড়ে পিচ উঠেগিয়েছে। স্থানীয় লোকজন বলেন, প্রতিদিন আমরা এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করি এবং ফসল মৌসুমে ফসল মালগাড়িতে বহন করে বাড়িতে নিয়ে যায়। তবে এ রাস্তার কাজ যেভাবে নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে করা হয়েছে তা কত দিন ভালো থাকবে তা এখন ভাবার বিষয়।
ভারতে সুতা রপ্তানি করা জনতা জুট মিল অবস্থিত ডোবরা এলাকায়। পশ্চিম পাশ এলাকার সাধারন শ্রমিকদের জনতা জুটমিলে যাওয়ার এক মাত্র রাস্তা এটা। শত শত শ্রমিক এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। সাতৈর গ্রামের আলিম শেখ বলেন, এত খারাপ সামগ্রী দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে যে, রাস্তার ওপরে গরুর গবর পড়াতে পিচ উঠে যাওয়ার উপক্রম। আর হালকা গাড়ি চললেও বেশি দিন এ রাস্তা টিকবে না । ভারী যান চললে তো রাস্তায় থাকবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, রাস্তা নির্মাণের কয়েকদিন পর বিভিন্ন স্থান গর্ত হয়ে দেবে গেছে। অনেক স্থান উঁচু নিচু হয়ে গেছে। তার অভিযোগ রাস্তায় কাজ করার সময় ঠিকাদার নতুন ইট, বালু দেননি। রাস্তার পুরাতন ইট তুলে তার ওপরে পিচ ঢেলে রোলার টেনেছেন। যার ফলে রাস্তা নির্মাণ হতে না হতেই পিচ ফেঁটে গিয়ে উঠে যাচ্ছে। এ যেন সরকারি টাকা গুলো যেনে শুনে পুরাটায় জলে ঢেলে দেয়া হয়েছে।
অনেক স্থানের আগের এজিং উঠিয়ে রাস্তা ছোট করে পূণরায় এজিং বসানো হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে এজিং থেকে ৪ ইঞ্চি ফাঁকা রেখে পিচ ঢালায় দেয়া হয়েছে। যে কোন সময় সম্পূর্ণ রাস্তার ক্ষতি হতে পারে। আগের রাস্তায় দুইটা মাল গাড়ি অনায়াশে ক্রোসিং করতে পরতো, রাস্তা ছোট করাতে তা এখন কষ্টকর।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। নিন্মমানের কাজ হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জানানো হবে এবং এ কাজের সঠিক তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী রাশেদ ইকবাল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, কাজ নিয়ম অনুযায়ী করা হয়েছে। আসলে ওই স্থানের মাটি ও পরিবেশ অনেকটা খারাপ । রাস্তার পাশে অনেক পুকুর রয়েছে । যার ফলে রাস্তার সমস্যা হতে পাড়ে। আর রাস্তার ক্যাপাসিটি ১০ টন। কিন্তু রাস্তা দিয়ে ভারী যান চলা চল করার কারণে রাস্তা ভেঙে যেতে পাড়ে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সকল বিল দিয়ে দেয়া হয়েছে কি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিল পরিশোধ করা হয়েছে। তবে জামানত হিসাবে আমাদের কাছে ৫% টাকা জমা রয়েছে। ঠিকাদারের মোবাইল নাম্বার না পাওয়ায় তার বক্তব্য দেয় সম্ভব হলো না। তবে সাব কন্ট্রাক্টার মো. আবু কালাম এর মুঠোফোনে ০১৯৩৪৮৬৮০৩৮ নাম্বারে কল দিলে তাও বন্ধ পাওয়া যায়।
Leave a Reply